মাল্টিমিডিয়া ৫০ হাজার ক্লাসরুম ॥ স্কুল কলেজ মাদ্রাসায়ঃ

মাল্টিমিডিয়া ৫০ হাজার ক্লাসরুম ॥ স্কুল কলেজ মাদ্রাসায়ঃ বিভাষ বাড়ৈ ॥

জাতীয় শিৰানীতি ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন আর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে পাল্টে যাচ্ছে শিৰা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কৰের ধরন। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষায় শিক্ষিত করা, শ্রেণী শিক্ষণ আকর্ষণীয় করা এবং শহর ও গ্রামের শিৰার বৈষম্য দূর করার লৰ্য সামনে রেখে নেয়া হয়েছে বিশাল উদ্যোগ। লক্ষ বাস্তবায়নে দেশের ৩১ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরবরাহ করা হচ্ছে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ এ সংক্রান্ত সকল শিক্ষা উপকরণ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষণকে আধুনিক করার উদ্যোগের পর এবার বিদ্যুত আছে এমন ২০ হাজার ৫০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরির প্রকল্পও চূড়ানত্ম। কেবল তাই নয়, বিদু্যতবিহীন ৭ হাজার ৪১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় সোলার প্যানেল তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করা হবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের (২০১২) ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ৩১ হাজার সরকারী-বেসরকারী শিৰা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ এ সংক্রান্ত সকল শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করবে সরকার। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিৰা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিৰা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয় পুরো প্রক্রিয়া বাসত্মবায়ন করতে হাতে নিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রকল্প। ৪৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাসত্মবায়িত হবে সরকারের নিজস্ব অথর্ায়নে। সরকারী ও বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে যেগুলোতে বিদু্যত সংযোগ আছে সেগুলোতে আইসিটি শিৰা উপাদান সরবরাহ করা হবে।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতি উপজেলায় গড়ে কমপৰে ২০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (যেগুলোতে বিদু্যত সংযোগ আছে) আইসিটি শিৰা উপকরণ সরবরাহ করা হবে। শিৰা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া কাজে সরকারের ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে 'ইনট্রুডাকশন অব আইসিটি এট সেকেন্ডারি এ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল'। সরকারের এ উদ্যোগের মধ্যে আছে শিৰকদের প্রশিৰণও। শিৰা প্রতিষ্ঠানে যারা এই বিষয়ে শিৰার্থীদের বোঝাবেন সেই শিৰকদের জন্য প্রকল্পে আছে প্রশিৰনের ব্যবস্থা। মাধ্যমিকের নবম ও দশম শ্রেণী ও উচ্চ মাধ্যমিক শিৰা সত্মরে বর্তমানে কম্পিউটার শিৰা ঐচ্ছিক (অপশনাল) বিষয় হিসেবে চালু আছে। আইসিটি প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের কমপৰে একজন কম্পিউটার বিষয়ের শিৰককে দেয়া হবে প্রশিৰণ। দেশের ১০ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হবে। জানা গেছে, এ বিষয়ে একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রসত্মাবনা) প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাসত্মবায়নাধীন এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে 'আইসিটি স্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইন প্রাইমারি স্কুল'। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিক শিৰা সত্মরের এই প্রকল্প বাসত্মবায়ন করা হবে। আছে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্য প্রযুক্তি শিৰার সুযোগ। শিশু শিৰাথর্ীদের কাছে পাঠদান আরও আকর্ষণীয় ও প্রযুক্তির প্রতি শিশু শিৰাথর্ীদের আগ্রহ বৃদ্ধিতে দেশের ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ১টি করে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। চলতি বছরেই সবকটি মডেল বিদ্যালয়ে আইসিটি শিৰা উপকরণ পেঁৗছে যাবে বলে আশাবাদী প্রাথমিক শিৰার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় শিৰা প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। শিৰাথর্ীদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সমর্্পকে দৰ করে গড়ে তুলতেই হবে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সব মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ও অন্যান্য শিৰা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। পযর্ায়ক্রমে বেসরকারী বিদ্যালয়েও এসব উপকরণ সরবরাহ করা হবে।


এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিৰণকে আধুনিক করার উদ্যোগই কেবল নয় একই সঙ্গে অত্যাধুনিক হচ্ছে সরকারী বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার শ্রেণী কৰ। বিদু্যত আছে এমন ২০ হাজার ৫০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরম্নম তৈরির প্রকল্পও চূড়ানত্ম। কেবল তাই নয়, বিদু্যতবিহীন ৭ হাজার ৪১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় সোলার প্যানেল স্থাপন করে প্রতিষ্ঠা করা হবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরম্নম। ২০ হাজার ৫০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরম্নম তৈরির প্রকল্পের জন্য নেয়া হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকার প্রকল্প। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। বিদু্যতবিহীন ৭ হাজার ৪১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় সোলার প্যানেল স্থাপন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরম্নম প্রতিষ্ঠায় নেয়া হয়েছে ৬১০ কোটি টাকার প্রকল্প। এই প্রকল্পে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরম্নম তৈরির ব্যয় ছাড়াও প্রতিটি শিৰা প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। সরকারের এই প্রকল্পকে ব্যতিক্রম ও যুগানত্মকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশিস্নষ্ট সকলেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিৰা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেছেন, শিৰানীতি ও ভিশন ২০২১ বাসত্মবায়নের আলোকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির শিৰা সারাদেশে দ্রম্নত সম্প্রসারণ করতে হবে। প্রাথমিক থেকে শিৰার উচ্চতর সত্মর পর্যনত্ম কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি শিৰার ব্যবহার সম্প্রসারণ করতে হবে।

সেই লৰ্যেই সরকারের এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, শিৰানীতিতেও যত দ্রম্নত সম্ভব শিৰার্থীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিৰা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, শিৰাথর্ীদের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) শিৰায় শিৰিত করা, শ্রেণী শিৰণকে আকর্ষণীয় করা এবং শহর ও গ্রামের শিৰার বৈষম্য দূর হবে যুগানত্মকারী এই উদ্যোগের ফলে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের পুরো শিৰা ব্যবস্থার ওপর।
প্রাথমিক শিৰা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কানত্মি ঘোষ জনকণ্ঠকে বললেন, এই উদ্যোগের সুফল সম্পর্কে। তিনি বললেন, সব মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০ হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া ও অন্যান্য শিৰা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিৰার্থীরা শ্রেণী কৰে একটি বিষয় শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখতে পারবে। এর ফলে শিৰা শিশুদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনি সহজে শিৰা আয়ত্তও করতে পারবে শিশুরা। এদিকে সরকারের এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি করতে পরলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এটি হবে একটি মাইলফলক।

Monday, December 12, 2011

তিন বছরে আমরা দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করেছি, নাটোরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী


তিন বছরে আমরা দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করেছি, নাটোরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
জোট মহাজোট শাসনামলের তুলনামূলক বিচার করুন: শেখ হাসিনা
১২ ডিসেম্বর ২০১১, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার নাটোরে এক বিশাল জনসভায় বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছরে দেশকে কী দিয়েছেন? মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, বাংলাভাই, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচার ছাড়া দেশবাসীকে তো কিছুই দিতে পারেননি। ক্ষমতায় থেকে জাতিকে লাশ উপহার দিয়েছেন, আর দুর্নীতি করে নিজেরা সম্পদশালী হয়েছেন। অথচ আমরা মাত্র তিন বছরেই দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত করেছি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসলেই দেশের মানুষ কিছু পায়, আর বিএনপি-জামায়াত লুটেপুটে খেতে ক্ষমতায় আসে। জনগণের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারের দায়ে খালেদা জিয়াকে দেশবাসীর সামনে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। দেশবাসীই তার বিচার করবে। বনলতা সেনের স্মৃতিবিজড়িত নাটোরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালী মাঠে সদ্য প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হানিফ আলী শেখের স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যে জাতি যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে পারে, সেই জাতি কেন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে না? তিনি বলেন, দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। ২০০৮ সালের জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিময় করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই। দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, তা যেন পালন করতে পারি সেজন্য আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই। আমরা দেশকে বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদাশীল হিসাবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী নাটোরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নাটোরে শিল্প কল-কারখানা গড়ে তুলতে নাটোরে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হবে। তিনি নাটোর সদর হাসপাতালকে আড়াই'শ শয্যায় উন্নীত, টিভি উপকেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ স্টেশনে রূপান্তর, নলডাঙ্গা থানাকে উপজেলায় উন্নীত করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলে লাখো জনতা গগনবিদারী শ্লোগান ও হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।
বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই পুত্রের দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা-খুন, সন্ত্রাস ও আর দুর্নীতি এটাই ছিল বিএনপির নীতি। বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই পুত্রের দুর্নীতি আর বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মার্কিন ফেডারেল কোর্টে উঠে এসেছে কীভাবে তাঁর দুই পুত্র দুর্নীতি করে বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার করেছে। সিঙ্গাপুরেরও দুই পুত্রের পাচারকৃত অর্থ ধরা পড়েছে। মার্কিন এফবিআই কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে সাক্ষী দিয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রীর পুত্রের কুকীর্তির কথা। এটা বাংলাদেশের জন্য লজ্জা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী কী তাঁর পুত্রদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও বিদেশে অর্থপাচারের শিক্ষা দিয়েছেন? তাঁর পুত্ররা দেশের মাথা হেঁট করলো তার জবাব কে দেবে?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বর্তমান সরকারের তিন বছরে সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরে বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে কেন আওয়ামী লীগ সরকারের ১০টাকার চাল ৪০ টাকা হলো? কেন জঙ্গীবাদ-বাংলা ভাইদের সৃষ্টি করা হলো? কেন একদিনে সারাদেশের ৫শ' স্থানে একযোগে বোমাবাজি হলো? তিনি দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৫ বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারেনি। বিদ্যুতের নামে জনগণকে দিয়েছে খাম্বা, আর দুর্নীতি করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা মাত্র আড়াই বছরে ২ হাজার ৬শ' মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারলে খালেদা জিয়ারা পারলেন না কেন? বিরোধী দলীয় নেত্রীকে অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে। বর্তমান সরকার আসার পর তো দেশে কোথাও জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি ও সন্ত্রাস নেই। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সন্ত্রাসের দেশ হিসাবে। আমরা ক্ষমতায় এসে সেই কলঙ্কের কালিমা মোচন করেছি। সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে সম্ভাবনার দেশ হিসাবে।
বর্তমান সরকারের সময় দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ আজ প্রতিটি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছেন। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আর গণতন্ত্র ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে। ঈদ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ সকল ধর্মের মানুষ অত্যন্ত উত্সবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্মীয় উত্সব পালন করেছে। কোথায় কোন ধরনের ব্যাঘাত ঘটেনি। তিনি বলেন, মাত্র তিন বছরেই আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে যা করেছি, অতীতে কোন সরকার তা করতে পারেনি।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উন্নত-সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে পালনের দৃঢ় অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে দেশ সেবার সুযোগ পেলে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবোই। যেখানে দেশের কোন মানুষের কষ্ট থাকবে না, উন্নত জীবন পাবে, কেউ গৃহহারা থাকবে না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে শান্তিময় দেশ হিসাবে গড়ে তুলবোই ইনশাল্লাহ।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এ স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুছ এমপি, জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, অধ্যাপিকা অপু উকিল এমপি, শেফালী মমতাজ এমপি, পংকজ দেবনাথ, কৃষক লীগ নেতা ওহিদুর রহমান, জেলার নেতা আবুল কালাম আজাদ, মিজানুর রহমান, ইসাহাক আলী, আবুল হোসেন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সিরাজুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমীতে যান। সেখানে ২৮তম বিসিএস শিক্ষানবিস সহকারি পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ, প্যারেড পরিদর্শন ও বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিস সহকারি পুলিশ সুপারদের মধ্যে পদক বিতরণ শেষে তাঁদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সারদা পুলিশ একাডেমির আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে আসেন নাটোরে। নাটোরের বড়ভিটায় রাজলঙ্কা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর কানাইখালী মাঠে ভাষণ দেয়ার পর হেলিকপ্টারযোগে সন্ধ্যার আগেই ঢাকায় ফিরে যান।

No comments:

Post a Comment